Blog

  • নবজাতক মৃত শিশু কন্যাকে পুরুষ গোসল দেয়া

    প্রশ্ন: অপ্রাপ্তবয়স্ক মৃত মেয়ে শিশুকে. পুরুষ গোসল দিতে পারবেন? কিংবা মৃত ছেলেকে নারী গোসল দিতে পারবেন?

    উত্তর: শিশু কথা বলার বয়সে উপনীত হওয়ার আগ পর্যন্ত মেয়েকে পুরুষ এবং ছেলেকে নারী গোসল দিতে পারবেন। তবে উত্তম হলো মৃত শিশু মেয়েকে নারী গোসল দেবেন আর ছেলেকে পুরুষ গোসল দেবেন।

    1. رد المحتار لابن عابدين، كتاب الصلاة، باب صلاة الجنائز 5/ 224:
    قال في الفتح (الصغير والصغيرة إذا لم يبلغا حد الشهوة، يغسلهما الرجال والنساء) وقدره في الأصل: بأن يكون قبل أن يتكلم.

    2. الفتاوى التاتارخانيه لعالم بن علاء الهندي، كتاب الصلاة، الفصل: الثاني والثلاثون، الجنائز، غسل الميت 3/ 16:
    وتغسل المرأة الصبي الذي لم يتكلم، ويغسل الرجل الصبية التي لم تتكلم، وفی الخانیة: إذا لم يبلغا حد الشهوة؛ لأنه ليس لأعضائهما حكم العورة.

    واللہ أعلم بالصواب
    উত্তর প্রদানে:
    মুফতি জিয়াউর রহমান
    মুফতি মাদরাসাতুল ফিকহিল ইসলামী
    মুহাদ্দিস জামিয়া মাহমুদিয়া সোবহানীঘাট, সিলেট
    ইমাম ও খতিব আম্বরখানা জামে মসজিদ

  • আমাদের দেশে আরাফার রোযা কবে?

    আমাদের দেশে আরাফার রোযা কবে?

    আরাফার রোযার ফযীলত ও আমাদের দেশে আরাফার দিবসের রোযা কোনদিন?

    যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশক অত্যন্ত তাৎপর্যবহ ও ফযীলতপূর্ণ। এই দশদিনের আমল ও ইবাদত আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন-

    ما من أيام العمل الصالح فيهن أحب إلى الله من هذا الأيام، قيل : ولا الجهاد في سبيل الله؟ قال: ولا الجهاد في سبيل الله إلا من خرج بنفسه وماله فلم يرجع من ذلك بشيء.

    অর্থাৎ এমন কোনো দশক (দশদিন) নেই, যার নেক আমল আল্লাহর কাছে এই দিনগুলোর চেয়েও বেশি প্রিয়। আরজ করা হলো, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও কি নয়? বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়, তবে যে তার প্রাণ ও সম্পদ নিয়ে বের হয়েছে এবং কোনো কিছু নিয়েই ফিরে আসে নি (অর্থাৎ শাহাদাত বরণ করেছে)।
    (সহীহ বুখারী : ৯৬৯, কিতাবুল ঈদাইন, মুসনাদে আহমদ, হাদীস: ১৯৬৮)

    অপর হাদিসে এসেছে-

    صيام يوم عرفة أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده

    অর্থ: ইয়াওমে আরাফার রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, তিনি এর দ্বারা আগের এক বছরের ও পরের এক বছরের গোনাহ মাফ করবেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১১৬২)

    তাছাড়া রাসূল ﷺ থেকে সুস্পষ্টভাবে ৯ যিলহজ্ব রোযা রাখার কথা বর্ণিত হয়েছে-

    کَانَ رَسُولُ اللّٰهِ صلی الله علیه و سلم یَصُومُ تِسْعَ ذِی الحِجَّةِ وَیَومَ عَاشُورَاء.

    অর্থ: রাসূলুল্লাহ ﷺ যিলহজ্বের ৯ম তারিখ ও মুহাররামের ১০ম তারিখ রোযা রাখতেন৷ (আবু দাউদ: ২৪৩৭, নাসাঈ: ২৩৭২, আহমদ: ২২৩৩৪, সনদ সহীহ)

    আমাদের দেশে ইয়াওমুল আরাফাহ তথা আরাফার দিবসের রোযা ৯ যিলহজ্ব৷ ৮ যিলহজ্ব নয়৷ এ প্রসঙ্গে কয়েকটি পয়েন্ট আরয করব-

    ১. আরাফার দিবসের রোযা মানে ৯ যিলহজ্বের রোযা৷ আমাদের দেশের ৮ যিলহজ্বের রোযা নয়৷ আরাফার রোযা আরাফার ময়দানে অবস্থানের সাথে সম্পর্কিত নয়৷ যদি তাই হতো, তাহলে হাজীদের জন্যেও এই রোযার বিধান থাকত৷ অথচ হাজী সাহেবদের জন্যে এ দিন রোযার বিধান নেই৷

    ২. আরাফার দিবসের রোযা যদি আমাদের দেশের ৮ যিলহজ্ব হতো, তাহলে পরের দিন ইয়াওমুন নাহর অর্থাৎ পরের দিন কুরবানির দিন হতো৷ অথচ সবাই ১০ যিলহজ্বই কুরবানি করেন৷ ৯ তারিখ নয়৷

    ৩. আরাফার দিবসের রোযা যদি আমাদের দেশের ৮ যিলহজ্ব হয়, তাহলে তাকবীরে তাশরীক তো এই দিনের ফজর থেকে শুরু হওয়ার কথা৷ অথচ তাকবীরে তাশরীক শুরু হয় ৯ যিলহজ্ব ফজর থেকে৷

    عن علي رضي الله عنه: أنه كان يكبر بعد صلاة الفجر يوم عرفة، إلى صلاة العصر من آخر أيام التشريق، ويكبر بعد العصر.
    رواه ابن أبي شيبة في مصنفه وإسناده صحيح كما في الدراية.
    অর্থ: আলী রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি আরাফার দিন ফজর থেকে আইয়্যামে তাশরীকের (১৩ যিলহজ্বের) আসর পর্যন্ত তাকবীরে বলতেন৷ (মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা, হাদীস : ৫৬৭৭, ৫৬৭৮, সনদ সহীহ)

    ৪. আরাফার দিবস যদি আমাদের দেশের হিসাবে ৮ যিলহজ্ব পালন করা হয়, আর ১০ যিলহজ্ব ইয়াওমুন নাহর অর্থাৎ কুরবানির দিন তথা ঈদুল আযহা হয়; তাহলে ৯ যিলহজ্ব তথা মঙ্গলবার কোন্ দিবস? ৮ যিলহজ্ব আরাফার দিবস হলে আর এদিকে যেহেতু ১০ যিলহজ্ব ঈদুল আযহা তথা কুরবানির দিন, তাহলে ৯ যিলহজ্ব তো মধ্যখানে গ্যাপ থেকে যাচ্ছে৷

    ৫. সৌদি আরবের সাথে মিলিয়ে আরাফার রোযা রাখলে যেসব দেশ সৌদি আরবের পশ্চিমে অবস্থিত, তাদের চাঁদ তো একদিন আগে আকাশে উদিত হয়, সৌদি আরবের ৯ যিলহজ্ব তথা আরাফার দিন তো তাদের ১০ যিলহজ্ব হয়৷ এ দিন রোযা রাখা তো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম৷ তাহলে ওই দেশসমূহের তো সৌদির সাথে মিল রেখে আরাফার রোযা রাখা সম্ভব হচ্ছে না৷

    খোদ আরব শীর্ষ আলেমের মতামত দেখুন

    আরব বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আলেম শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ আল-উসায়মীন রাহ. এ ব্যাপারে বলেন- ‘চাঁদের বিষয় নিয়ে আলেমদের মধ্যে ইখতিলাফ রয়েছে। তিনি অন্যান্য সিয়ামের মত আরাফার সিয়ামকেও নিজ নিজ দেশের ৯ তারিখ অনুযায়ী রাখার মতকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং আম দলীল পেশ করেছেন৷ (মাজমূআ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল: ২০/২৮)

    (সৌদির সঙ্গে মিল রেখে আরাফার রোযা পালনের প্রবক্তাদের সামনে ইতমামে হুজ্জত তথা চূড়ান্ত প্রামাণ্য উপস্থাপনের জন্য শায়খ ইবনু উসাইমীনের মতামত তুলে ধরলাম৷ কেননা শায়খের মতামত অগ্রগণ্য মনে করেন৷ নতুবা এমন বক্তব্য না থাকলেও নিজ নিজ দেশের ৯ তারিখ ইয়াওমে আরাফা৷)

    মোটকথা আমাদের চাঁদ দেখা মতে ৮ তারিখকে আরাফার দিবস গণ্য করলে মাসআলাগত দিক দিয়ে অনেক প্রশ্ন সামনে আসে, যার সমাধান অনেক দুরূহ এবং জটিল ব্যাপার৷ যার ভিত্তি হচ্ছে চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য হওয়া না হওয়ার যুগ যুগ ধরে চলে মতভিন্নতা৷

    তাই প্রত্যেকে নিজ নিজ দেশ ও অঞ্চলের চাঁদ দেখার ভিত্তিতেই ৯ তারিখে আরাফার রোযা রাখা উচিত৷ কারণ আরাফার ময়দানে অবস্থান করা সেদেশের ৯ তারিখই হচ্ছে৷

    লেখক: মুফতি জিয়াউর রহমান

  • ঈদুল আযহা পরবর্তী তিনদিনের মধ্যে যদি নফল রোযা রাখার দিন চলে আসে?

    প্রশ্ন: ঈদের পরের তিনদিনের মধ্যে যদি সোমবার কি বৃহস্পতিবার পড়ে যায়, তাহলে কী রোযা রাখা যাবে?

    উত্তর: না, আইয়্যামে তাশরীক তথা ঈদুল আযহা পরবর্তী তিনদিন পর্যন্ত রোযা রাখা নিষেধ। এই দিনসমূহের মধ্যে যদি সোমবার কি বৃহস্পতিবারও পড়ে যায়, তবুও রোযা রাখা যাবে না।

    হযরত আমর ইবনুল আস রাযি. বলেন-
    كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يامرنا بإفطارها وينهانا عن صيامها. قال مالك: وهى ايام التشريق.
    রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে এই (আইয়ামে তাশরীকের) দিনগুলোতে খাবার গ্রহণের ও রোযা না রাখার নির্দেশ দিতেন। ইমাম মালিক রাহ. বলেন এই দিনগুলো হচ্ছে আইয়্যামে তাশরীকের দিন। (আবু দাউদ: ২৪১৮, সনদ সহীহ)

    وَيُكْرَهُ صَوْمُ يَوْمِ الْعِيدَيْنِ، وَأَيَّامِ التَّشْرِيقِ، وَإِنْ صَامَ فِيهَا كَانَ صَائِمًا عِنْدَنَا، كَذَا فِي فَتَاوَى قَاضِي خَانْ. وَ لَا قَضَاءَ عَلَيْهِ إنْ شَرَعَ فِيهَا ثُمَّ أَفْطَرَ، كَذَا فِي الْكَنْزِ. هَذَا فِي ظَاهِرِ الرِّوَايَةِ عَنْ الثَّلَاثَةِ وَعَنْ الشَّيْخَيْنِ وُجُوبُهُ، كَذَا فِي النَّهْرِ الْفَائِقِ. (الفتاوى الهندية: 1/201)

  • ১২ যিলহজ্ব দুপুরের আগে পাথর মারলে কী হবে?

    প্রশ্ন: আমি ১২ যিলহজ্ব জামারাতে পাথর মেরেছি দুপুরের আগে, যদিও মারা দরকার ছিলো যুহরের সময়। এখন আমার করণীয় কী?

    উত্তর: ১০ যিলহজ্ব প্রথম পাথর মারার সময় শুরু হয় সুবহে সাদিক থেকেই। ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ ‘রামিয়ে জিমার’ তথা পাথর মারার সময় হচ্ছে যাওয়াল বা দ্বিপ্রহরের পর। যেহেতু আপনি যাওয়ালের আগেই পাথর মেরে নিয়েছেন; এখন আপনার দুটি করণীয়। এক. আইয়ামে তাশরীকের দিন বাকি থাকলে পুনরায় ওই পাথর মারতে হবে। এ ক্ষেত্রে দম আসবে না।

    আর যদি আইয়ামে তাশরীকের দিন চলে যায়, তাহলে হারামের এরিয়ার ভিতরে একটি দম দেওয়া ওয়াজিব হবে৷

    তবে ইমাম আবু হানিফা রাহ. থেকে যাওয়ালের আগে ১১ ও ১২ তারিখ পাথর মারার বৈধতার অপর একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। তাই বর্তমান ভীড়ের যুগে ইমাম আবু হানিফা রাহ.র দ্বিতীয় মত গ্রহণ করা হাজ্বী সাহেবদের জন্য সহজ হয়। এখন কেউ যদি এই মতের উপর আমল করে যাওয়াল বা দুপুরের আগে পাথর মেরে দম না দেন, তাহলেও সুযোগ আছে। (বাদায়েউস সানায়ে’: ২/৩৩৪, রদ্দুল মুহতার: ২/৪৮১)

    “قال في الدر: وأما في الثاني والثالث فمن الزوال لطلوع ذكاء

    وفي الرد: قال في اللباب: وقت رمي الجمار الثلاث في اليوم الثاني والثالث من أيام النحر بعد الزوال، فلا يجوز قبله في المشهور.” (کتاب الحج، جلد: 2، صفحہ:520، طبع: سعید)

  • হজ্বের সময় মিনায় রাত্রিযাপন করতে না পারলে কী হবে?

    প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম ভাই। একটি বিষয়ে আপনার জরুরী মতামত জানা প্রয়োজন।

    গুরুতর শারীরিক অসুস্থতার কারণে ১০ এবং ১১ জিলহজ আমি মিনার তাবুতে রাত্রি যাপন করতে পারিনি। যদিও মোয়াল্লেমের সহযোগিতায় হুইলচেয়ারের মাধ্যমে জামারাতে পাথর মারতে পেরেছি এবং আজকেও যাব ইনশাআল্লাহ।

    আমার স্ত্রী শারীরিকভাবে সুস্থ কিন্তু সাথে মাহারম না থাকার কারণে উনি একাকী মিনায় রাত্রি যাপন করতে যাননি।

    এক্ষেত্রে কি আমাদের হজের কোন কমতি অথবা ঘাটতি হয়েছে কিনা এবং হয়ে থাকলে সেটি পূরণ করার জন্য আমাদের করণীয় কি জানাবেন প্লিজ।

    উত্তর: মিনায় রাত্রিযাপন করা সুন্নাত। বিনা কারণে মিনায় রাত্রিযাপন না করা হোটেল বা অন্য কোথাও থাকা খেলাফে সুন্নাত ও মাকরুহ। প্রশ্নে বর্ণিত বিবরণ মতে আপনি ও আপনার স্ত্রী ওজরের কারণে মিনায় রাত্রিযাপন করতে পারেন নি বিধায় আপনাদের জন্য ব্যাপারটি মাকরুহও হবে না। দম, সাদাকা কোনো কিছুই ওয়াজিব হবে না।

    ویکره أن لایبیت بمنی لیال الرمی، ولو بات في غیره متعمداً لایلزمه شيءٌ عندنا”. ( التاتارخانیة 2/466)
    فقط واللہ اعلم

  • যিলহজ্ব মাসের তাৎপর্য ও আমল

    যিলহজ্ব মাসের তাৎপর্য ও আমল

    মুফতি জিয়াউর রহমান

    যিলহজ্ব মাস মহিমান্বিত মাসগুলোর একটি৷ রামাযানের পরেই যে মাসটি সবচে বেশি ফযিলতপূর্ণ ও তাৎপর্যমণ্ডিত৷ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল ও রুকন হজ্বের কার্যক্রম এ মাসেই সম্পন্ন করা হয়৷ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কুরবানি এ মাসেই আদায় করা হয়৷ তাছাড়া এ মাস সম্মানিত চার মাসের অন্যতম৷ ইসলাম-পূর্ব যুগ থেকেই এ মাসের সম্মান এবং মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত৷

    এ মাসের সবচেয়ে ফযিলতপূর্ণ অংশ হলো যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশক তথা আশারায়ে যিলহজ্ব৷ কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা এই দশকের শপথ করেছেন৷ ইরশাদ হচ্ছে-
    وَالْفَجْرِ. وَلَيَالٍ عَشْرٍ
    অর্থ: শপথ ফজরের৷ শপথ দশ রাত্রির৷ (সুরা ফাজর: ১-২)

    যেহেতু আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদের উপর অনুগ্রহ করে ইবাদতের জন্য বিশেষ বিশেষ মওসুম দিয়েছেন, যে সময়গুলোতে নির্ধারিত ও কাঙ্ক্ষিত ইবাদত করে বান্দা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য হাসিল করবে৷ সেই হিসেবে ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ মওসুম হলো, যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশক৷ এই দশকের ফযিলত ও তাৎপর্যের জন্য এটাই যথেষ্ট যে, আল্লাহ তাআলা এই দশকের কসম করেছেন৷ তদুপরি হাদিসে এই দশকের তাৎপর্য ও ফযিলত সম্পর্কে অনেক বিবরণ এসেছে৷ এই দশকের আমল (শহিদ হওয়া ছাড়া) জিহাদের চাইতেও অধিক ফযিলতপূর্ণ৷

    রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন-

    مَا مِنْ أَيَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيهَا أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ يَعْنِي أَيَّامَ الْعَشْرِ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ قَالَ: وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ، فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيْءٍ.

    অর্থ: আল্লাহর নিকট যিলহজ্ব মাসের দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও (এর চেয়ে উত্তম) নয়? তিনি বললেন, না, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে হাঁ, সেই ব্যক্তির জিহাদের চেয়ে উত্তম যে নিজের জান-মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়েছে। অতপর কোনো কিছু নিয়ে ঘরে ফিরে আসেনি। 

    (সহীহ বুখারী: ৯৬৯)

    আরেকটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন

    أَفْضَلُ أَيَّامِ الدُّنْيَا أَيَّامُ الْعَشْرِ، عَشْرِ ذِي الْحِجَّةِ، قَالَ: وَلَا مِثْلُهُنَّ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ قَالَ: لَا مِثْلُهُنَّ فِي سَبِيلِ اللَّهِ إِلَّا رَجُلٌ عَفَّرَ وَجْهَهُ فِي التُّرَابِ.

    অর্থ: দুনিয়ার সর্বোত্তম দিনগুলো হল, যিলহজ্বের দশদিন। জিজ্ঞাসা করা হল, আল্লাহর রাস্তায়ও কি তার সমতুল্য নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায়ও তার সমতুল্য নেই। তবে ঐ ব্যক্তি যার চেহারা ধুলিযুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ শাহাদাত লাভ করেছে। (মুসনাদে বাযযার: ১১২৮, মুসনাদে আবু ইয়ালা: ২০১০, ইবনে হিব্বান)

    যেহেতু উপরের দুই হাদিস থেকে যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশক ও সে দিনগুলোতে আমলের ফযিলতের বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, তাই এই দশকে আমরা খুবই গুরুত্ব সহকারে আমলে পরিব্যপ্ত হবো৷ এই দিনগুলোর প্রতিটা সময়কে আমরা গনিমত মনে করে কাজে লাগাব৷

    ফযিলতের আরো দুটি হাদিস

    হযরত আবু হুরায়রা রাযি. হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

    مَا مِنْ أَيَّامٍ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ أَنْ يُتَعَبَّدَ لَهُ فِيهَا مِنْ عَشْرِ ذِي الْحِجَّةِ، يَعْدِلُ صِيَامُ كُلِّ يَوْمٍ مِنْهَا بِصِيَامِ سَنَةٍ وَقِيَامُ كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْهَا بِقِيَامِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ

    অর্থ: এমন কোন দিন নেই যে দিনগুলোর (নফল) ইবাদাত আল্লাহ্ তাআলার নিকট যিলহাজ্জ মাসের দশ দিনের ইবাদাত হতে বেশী প্রিয়। এই দশ দিনের প্রতিটি রোযা এক বছরের রোযার সমকক্ষ এবং এর প্রতিটি রাতের ইবাদাত কাদরের রাতের ইবাদাতের সমকক্ষ। (তিরমিযী: ৭৫৮, ইবনু মাজাহ: ১৭২৮, মুসনাদে বাযযার: ৭৮১৬)

    হযরত হাফসা রাযি. থেকে বর্ণিত,

    أَرْبَعٌ لَمْ يَكُنْ يَدَعُهُنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صِيَامَ عَاشُورَاءَ، وَالْعَشْرَ، وَثَلَاثَةَ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَالرَّكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْغَدَاةِ

    অর্থ: নবী ﷺ কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেন নি। সেগুলো হল: আশুরার সওম, যিলহজ্বের দশ দিনের সওম, প্রত্যেক মাসে তিন দিনের সওম, ও ফযরের পূর্বের দুই রাকাত সালাত। (আহমদ: ৬/২৮৭, আবু দাউদ: ২১০৬, নাসায়ী: ২২৩৬، সহীহ ইবনু হিব্বান: ১৪/৩৩২)

    বর্ণনা দুটির সনদে যদিও দুর্বল রাবী রয়েছেন, কিন্তু আমলযোগ্য হওয়ায় এখানে নিয়ে আসা হয়েছে৷

    আবু উসমান আন-নাহদি রাহ, বলেন: সালাফে সালেহীন তিনটি দশককে খুবই গুরুত্ব দিতেন৷ অধিক আমলে সচেষ্ট হতেন৷
    এক- রামাযানের শেষ দশক৷
    দুই- যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশক৷
    তিন- মুহররম মাসের প্রথম দশক৷
    (লাতাইফুল মা’আরিফ: ৩৯)

    এই দশকের আমলসমূহ:

    ১. যিলহজ্ব মাস প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে নখ, চুল ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব৷ তাই যিলকদ মাসের শেষের দিকে নখ, চুল ইত্যাদি কেটে নেয়া উত্তম৷ হাদিসে এসেছে-

    إِذَا رَأَيْتُمْ هِلَالَ ذِي الْحِجَّةِ، وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ، فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ وَأَظْفَارِهِ.

    অর্থ: যখন যিলহজ্বের দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কুরবানী করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে। (সহীহ মুসলিম: ১৯৭৭, তিরমিযি: ১৫২৩)

    এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, যারা কুরবানি করবে, কেবল তারাই এই দশকে নখ, চুল কাটা থেকে বিরত থাকবে৷ তবে অন্য রেওয়ায়াত থেকে এটাও বোঝা যায় যে, এই হুকুম যারা কুরবানি করবে, শুধু তাদের জন্য না, বরং যারা কুরবানি করবে না, তাদের জন্যও প্রযোজ্য৷ যারা কুরবানি করবে না, তারাও মুস্তাহাব পালনের নিয়তে হাজি সাহেবগণের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে নখ, চুল কাটা থেকে বিরত থাকতে পারে৷

    ২. এই ৯ দিন রোযা রাখা৷ হাদিসে এসেছে, রাসুল ﷺ এই দিনগুলোতে রোযা রাখতেন৷ যদিও আরাফার অর্থাৎ নয় যিলহজ্বের রোযার বিবরণ ছাড়া বাকি ৮ দিনের রোযা রাখার বিবরণগুলো যঈফ পর্যায়ের, তবুও সবগুলো হাদিস মিলিয়ে আমলযোগ্য৷

    ৩. আরাফার দিবসের অর্থাৎ ৯ যিলহজ্বের রোযা রাখা অনেক বড় ফযিলতের আমল৷ হাদিসে এসেছে-
    صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ، وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ.

    অর্থ: ইয়াওমে আরাফার (নয় যিলহজ্ব) রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, তিনি এর দ্বারা এর আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।
    (সহীহ মুসলিম১১৬২, তিরমিযি: ৭৪৯, আবু দাউদ: ২৪২৫)

    ৪. ৯ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১৩ যিলহজ্ব আসর পর্যন্ত সর্বমোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর পুরুষ-নারী সবার জন্য তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা ওয়াজিব৷ পুরুষরা শব্দ করে এবং নারীরা আস্তে করে তাকবির পাঠ করবে৷ কুরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে-

    وَ اذْكُرُوا اللّٰهَ فِیْۤ اَیَّامٍ مَّعْدُوْدٰتٍ
    অর্থ: আর তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর (আইয়ামে তাশরীকের) নির্দিষ্ট দিনগুলোতে। (সূরা বাকারা: ২০৩)

    তাকবিরে তাশরিক হলো-
    الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلاالله والله أكبر، الله أكبر ولله الحمد.

    ৫. ঈদুল আযহার নামায: যিলহজ্ব মাসের দশম তারিখ অর্থাৎ নবম যিলহজ্ব আরাফার দিবসের পরের দিন হলো, ঈদুল আযহা বা কুরবানির ঈদ৷ ঈদুল আযহা মুসলিম মিল্লাতের দ্বিতীয় ঈদের দিন৷
    ঈদুল আযহার নামায প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন পুরুষের উপর ওয়াজিব। রাসুলুল্লাহ ﷺ ঈদের নামায নিয়মিত আদায় করেছেন৷ সে যুগে মহিলারাও ঈদের নামাযে শরিক হতেন৷

    কিন্তু আজকাল মানুষের দীনি অবস্থা, তাকওয়া ও পরহেযগারীর এই দৈন্যকালে নারিদের সাধারণভাবে ঈদগাহে আসার জন্য উৎসাহ প্রদান করা মোটেও ঠিক হবে না৷ যেখানে পরবর্তি যুগে সাহাবায়ে কেরাম প্রায় সবাই একমত হয়ে গিয়েছিলেন নারিদের ঘরের বাইরে গিয়ে মসজিদে নামায আদায়ের বিপক্ষে, সেখানে এ যুগের মতো নাজুক পরিস্থিতির সময় নারিদের উৎসাহিত করে ঈদগাহে নিয়ে যাওয়া মোটেও সমীচীন নয়৷

    ৬. ঈদের নামায আদায়ের পর কুরবানি করা৷ যেহেতু এ দিনের আরেকটি ফযিলতপূর্ণ আমল হচ্ছে কুরবানি করা, তাই ঈদুল আযহার নামায ফজরের নামাযের পর সূর্যোদয়ের পরপরই বেশি দেরি না করে আদায় করে নেয়া সুন্নাত৷ কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে-
    فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَ انْحَرْ.

    অর্থ: আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানি করুন। (সুরা কাওসার: ২)

    সামর্থ্যবান থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না, তার ব্যাপারে হাদিসে কঠোর ধমকি এসেছে-

    عن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من وجد سعة لأن يضحي فلم يضح فلا يقربن مصلانا.

    অর্থ:আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, যার কুরবানির সামর্থ্য আছে তবুও সে কুরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে৷ (মুসনাদে আহমদ: ২/৩২১; হাকেম: ৭৬৩৯; আত্তারগীব ওয়াত-তারহীব: ২/১৫৫)

    উপরোক্ত কুরআনের আয়াত, হাদিস ও অন্যান্য দলিলের আলোকে অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম সামর্থ্যবানদের জন্য কুরবানি করা ওয়াজিব বলেছেন৷

    ৭. এ দিনগুলোতে মৌলিক ইবাদতগুলোর সমাবেশ ঘটে৷ হাফেয ইবনু হাজর আসকালানী রাহ. ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেন-

    والذي يظهر أن السبب في امتياز عشر ذي الحجة لمكان اجتماع أمهات العبادة فيه وهي الصلاة والصيام والصدقة والحج ولا يتأتى ذلك في غيره

    অর্থ: যিলহজের দশকের বৈশিষ্ট্যের কারণ যা প্রতীয়মান হয় তা হলো, এতে সকল মৌলিক ইবাদতের সন্নিবেশ ঘটে। যথা : সালাত, সিয়াম, সাদাকা, হজ্ব ইত্যাদি। অন্য কোনো দিন এতগুলো ইবাদতের সমাবেশ ঘটে না। (ফাতহুল বারী : ২/৪৬০)

    তাই সবগুলো আমল করার প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত৷

    ৮. এই দিনগুলোতে অধিক পরিমাণে আল্লাহ তাআলার যিকির তথা তাসবীহ, তাহলীল পাঠ করা৷ সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ; এই তাসবীহগুলো বেশি বেশি পাঠ করা৷ যেমন হাদিসে এসেছে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন-

    ما من أيام أعظم عند الله ولا أحب إليه من العمل فيهن من هذه العشر، فأكثروا فيهن من التهليل والتكبير والتحميد.

    অর্থ: এ দশ দিনে (নেক) আমল করার চেয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে অধিক প্রিয় ও মহান আর কোনো আমল নেই। তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) তাকবীর (আল্লাহু আকবার) তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি করে আদায় কর। (মুসনাদে আহমদ: ৫৪৪৬)

    ৯. বেশি বেশি করে তাওবা ইস্তেগফার করা৷ আল্লাহ তা’আলা বলেন-

    ﻭَﺗُﻮﺑُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ الله ﺟَﻤِﻴﻌﺎً ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﻔْﻠِﺤُﻮﻥَ.

    অর্থ: মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও৷ (সুরা নুর: ৩১)

    ﻭﻋَﻦْ ﺍﻷَﻏَﺮَّ ﺑﻦ ﻳﺴﺎﺭ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺗُﻮﺑُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﺈِﻧِّﻲ ﺃَﺗُﻮﺏُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻣِﺎﺋَﺔَ ﻣَﺮَّﺓٍ.
    অর্থ: রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন: হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর। কেননা, আমি দিনে একশ বার আল্লাহর কাছে তওবা করি। (মুসলিম হাদীস নং-২৭০২)

    ১০. বিশেষভাবে এই দশকে এবং সাধারণভাবে সবসময় গোনাহ বর্জন করা৷ যেহেতু যিলহজ্ব মাস হচ্ছে চারটি সম্মানিত মাসের অন্যতম, তাই এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ আদাব হলো গোনাহমুক্ত থাকা৷

    এই দশক নিয়ে আমরা প্রত্যেকে একটা পরিকল্পনা সাজাতে পারি যে, আমরা এই ১০ দিন কোনো ওয়াক্তের নামাযের জামাত মিস করব না। প্রতিরাত তাহাজ্জুদ পড়ব। প্রতিদিন ইশরাকের নামায পড়ব। নফল নামায বেশি বেশি করে পড়ব। প্রতিদিন সাদাকা করতে ভুলব না। অন্তত এক খতম কুরআন তিলাওয়াত করব ইত্যাদি।

    আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন৷

  • স্ত্রী তালাকের দাবি করছে, স্বামীর অস্বীকার

    প্রশ্ন: স্ত্রী দিপা আক্তারের দাবি হলো, তার স্বামী ফয়সল আহমদ তাকে তিন তালাক দিয়েছে, এদিকে স্বামী বিষয়টি অস্বীকার করছে। সমাধান কী?

    حامدا ومصليا ومسلما

    الجواب بإسم ملهم الصواب

    প্রশ্নে বর্ণিত বিবরণ সত্যি হওয়ার শর্তে শরীয়তের ফয়সালা হলো এই-

    স্ত্রী দিপা বেগম দাবি করছে যে, তার স্বামী ফয়সল আহমদ তাকে তালাক প্রদান করেছে। কিন্তু তালাকের বিষয়টি স্বামী ফয়সল আহমদ অত্যন্ত জোরালোভাবে অস্বীকার করছে।

    এহেন পরিস্থিতিতে স্বামী তালাক দিয়েছে বলে স্ত্রীর কাছে দুজন শরয়ী সাক্ষী চাওয়া হবে। স্বামীর প্রশ্নের বিবরণে উল্লেখ রয়েছে যে, স্ত্রী দিপা আক্তার রিমা তালাকের পক্ষে যাদেরকে সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করেছে, তারা তালাকের বিষয়টি অস্বীকার করেছে৷ তাই সাক্ষী প্রমাণিত হয় নি।

    অপরদিকে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেয় নি বলে আল্লাহর নামে কসম করবে।

    ইতোমধ্যে স্বামী ফয়সল আহমদ এই ফতোয়া প্রদানকারীর কাছে মৌখিকভাবে আল্লাহর নামে কসম করে বলেছে যে, সে তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করে নাই।

    তাই স্বামীর কসমের উপর ভিত্তি করে স্ত্রী দিপা আক্তারের উপর তালাক পতিত হয় নি এবং বিবাহ বহাল রয়েছে বলেই ফয়সালা দেয়া হবে৷

    এখন যদি স্ত্রী সত্যিকার অর্থেই স্বামীর কাছ থেকে নিজ কানে তিন তালাক শুনে থাকে, এ ব্যাপারে স্ত্রী নিশ্চিত থাকে, কিন্তু স্বামী অস্বীকার করে, তাহলে স্ত্রী নিজেকে স্বামী থেকে পৃথক রাখবে। নতুবা তালাক নিতে হলে স্বামীর কাছ থেকে খুলা তথা যে কোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও তালাক নিবে।

    عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي خُطْبَتِهِ:البَيِّنَةُ عَلَى المُدَّعِي، وَاليَمِينُ عَلَى المُدَّعَى عَلَيْهِ۔ سنن الترمذی،مطبعۃ مصطفیٰ البابی،مصر،الطبعۃ الثانیۃ،1395ھ،رقم الحدیث:1341۔

    وكذلك إن سمعت أنه طلقها ثلاثا وجحد الزوج ذلك وحلف فردها عليه القاضي لم يسعها المقام معه، وينبغي لها أن تفتدي بمالها أو تهرب منه۔۔۔الخ الفتاویٰ الہندیۃ،دارالفکر،بیروت،الطبعۃ الثانیۃ،1310ھ،ج:5،ص:313

    والمرأة كالقاضي إذا سمعته أو أخبرها عدل لا يحل له تمكينه. ردالمحتار،دارالفکر،بیروت،الطبعۃ الثانیۃ،1412ھ،ج:3،ص:251۔

    উত্তর প্রদানে-
    মুফতি জিয়াউর রহমান
    ইমাম ও খতিব আম্বরখানা জামে মসজিদ
    মুহাদ্দিস জামিয়া মাহমুদিয়া সোবহানীঘাট, সিলেট

  • ইফতারের পূর্বে দুআ কবুল কী শুধু ফরয রোযার ক্ষেত্রে?

    প্রশ্ন: ইফতারের সময় রোযাদারের দুআ কবুল হয় মর্মে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, তা কী শুধু ফরয রোযার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? নাকি নফল রোযাদারের দুআও ইফতারের কবুল হয়?

    উত্তর: ইফতারের সময় রোযাদারের দুআ কবুল হয় মর্মে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, সেখানে নির্দিষ্ট করা হয় নি যে, শুধু ফরয রোযাদারের দুআ কবুল হবে, বরং হাদিসের ভাষ্য ব্যাপক। ফরয ও নফল উভয় রোযাই এখানে শামিল। হাদিসের বক্তব্য খেয়াল করুন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন-

    إن للصائم عند فطره لدعوة ما ترد

    অর্থ: নিশ্চয়ই রোযাদারের জন্য ইফতারের সময় এমন এক দুআ আছে, যা ফিরিয়ে দেয়া হয় না। (ইবনু মাজাহ: ১/৫৫৭)

    দেখুন, এখানে ফরয রোযা বা রামাযানের রোযা বলা হয় নি। শুধু রোযাদার বলা হয়েছে। তাই হাদিসের বক্তব্যকে আম হিসেবে গ্রহণ করে ফরয ও নফল সকল রোযাদারের ক্ষেত্রেই এই অর্থ গ্রহণ করা হবে।

  • ৫ মিনিট পূর্বে মুআযযিন সাহেব আযান দেওয়ার কারণে সবাই ইফতার করে ফেলেছে

    প্রশ্ন: মুআযযিন সাহেব ভুলে ইফতারের ৫ মিনিট পূর্বে আযান দিয়ে ফেলেছেন। এলাকার সবাই আযান শুনে ইফতার করে ফেলেছে। এই রোযার বিধান কী?

    উত্তর: নির্ধারিত সময়ের ৫ মিনিট পূর্বে ইফতার করার কারণে সবার রোযা ফাসিদ হয়ে যাবে। ঈদের পর সবাই একটি করে রোযা কাযা করবেন। যেহেতু ভুলবশত হয়েছে, তাই কাফফারা লাগবে না।

    কুরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-‍
    ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ
    অর্থ: তারপর রাতের আগমন পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর। (সূরা বাকারা: ১৮৭)

    আল-হেদায়া কিতাবে (১/১২৬) এসেছে-

    أو أفطر وهو يرى أن الشمس قد غربت فإذا هي لم تغرب ۔۔۔ و عليه القضاء
    অর্থ: … অথবা ইফতার করে ফেলেছে এই ধারণা করে যে, সূর্য অস্ত গিয়েছে, অথচ তখনও অস্ত যায় নি। তার উপর এই রোযার কাযা আবশ্যক।

    রদ্দুল মুহতারে এসেছে-

    تسحر أو أفطر يظن اليوم) الوقت الذي أكل فيه (ليلاٍ و) الحال أن (الفجر طالع و الشمس لم تغرب) ….. (قضی فقط). (رد المحتار: 4/ 436)
    উল্লেখ্য, ইফতার করা কিংবা সাহরি খাওয়া বন্ধ করা আযান হওয়া না হওয়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। টাইম দেখে ইফতার করবেন, টাইম দেখে সাহরি খাওয়া বন্ধ করবেন।

  • বিয়ের পূর্বে কনে দেখার গুরুত্ব ও ইসলাম

    বিয়ের পূর্বে কনে দেখা

    মুফতি জিয়াউর রহমান

    বিয়ে করার ক্ষেত্রে কনে দেখা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়৷ পরবর্তী দাম্পত্য জীবনের ভিত্তি এখান থেকেই শুরু। তাই কনে দেখার আগে ঠিক করে নেবেন আপনি বিয়ে কেন করছেন? সাময়িক সুখ লাভের জন্য? নাকি বিয়ের মাধ্যমে সুদূরপ্রসারী কোনো প্ল্যান আছে?

    অবশ্যই মুমিন প্ল্যান ছাড়া কোনো কাজ করতে পারে না।

    প্ল্যান-১. বিয়ের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

    وَمِنْ آَيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً.
    অর্থ: তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন৷ (সুরা রুম: ২১)

    প্ল্যান-২. বিয়ের মাধ্যমে চোখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজত। চরিত্রের হেফাজত। জীবন ও যৌবনকে পবিত্র রাখা।

    আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন-

    يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ البَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ

    অর্থ: হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিবাহ করে। কেননা, বিবাহ তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনতাকে সংযমী করে। (সহীহ বুখারী হাদীস নং-৪৭৭৮, সহীহ মুসলিম হাদীস নং-১৪০)

    প্ল্যান-৩. অধিক সন্তানের মাধ্যমে নবীজির খাঁটি উম্মতের সংখ্যা বৃদ্ধি।
    রাসূলুল্লাহ ﷺ অধিক সন্তান দানকারী নারীদের বিয়ে করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন৷ এটাই প্রমাণ করে শরীয়তে অধিক সন্তান হওয়া কাম্য৷ কম সন্তান হওয়া কাম্য নয়৷ যদি সবকিছুর এখতিয়ার আল্লাহ তাআলার হাতে৷

    নাবী কারীম ﷺ বলেছেন-

    تزوَّجوا الوَدودَ الولُودَ فإنِّي مُكاثِرٌ بِكُمُ الأُمَمَ.

    অর্থ: তোমরা এমন মেয়েদেরকে বিবাহ কর, যারা পতিপরায়ন ও অধিক সন্তান প্রসবকারীনী হয়৷ (অর্থাৎ এমন বংশ বা পরিবারের মেয়ে বিবাহ করো, যে বংশ বা ররিবারের মেয়েরা বেশী সন্তান ধারণ করে) কেননা, কিয়ামতের দিন আমি তোমাদের দ্বারা উম্মতের আধিক্য নিয়ে অন্য উম্মতদের মাঝে গর্ব করবো৷ (মুসনাদে আহমদ হাদীস নং-১২৬৩৪)

    হাদিসে কনে দেখার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে৷ রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন-

    إِذَا خَطَبَ أَحَدُکُمْ الْمَرْأَةَ فَإِنْ اسْتَطَاعَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَی مَا يَدْعُوهُ إِلَی نِکَاحِهَا فَلْيَفْعَلْ.
    অর্থ: তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোনো নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দিবে, তখন তার কোনো সৌন্দর্যের দিকে তাকানো সম্ভব হলে, তা যেন দেখে নেয়৷ (মুসনাদে আহমদ: ১৪৬২৬, আবু দাউদ: ২০৮২)

    আনাস রাযি. বলেন-
    أَنَّ الْمُغِيرَةَ بْنَ شُعْبَةَ أَرَادَ أَنْ يَتَزَوَّجَ امْرَأَةً فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلی الله عليه وآله وسلم اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّهُ أَحْرَی أَنْ يُؤْدَمَ بَيْنَکُمَا فَفَعَلَ فَتَزَوَّجَهَا فَذَکَرَ مِنْ مُوَافَقَتِهَا .
    মুগীরা ইবনে শুবা রাযি. এক নারীকে বিয়ে করার ইচ্ছা করলেন৷ রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে বললেন, যাও গিয়ে দেখো৷ কেননা আশা করা যায় তোমাদের মধ্যে প্রীতির সৃষ্টি হবে৷ তিনি তা-ই করলেন৷ এরপর তিনি ওই নারীকে শাদি করে নিলেন৷ পরে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সঙ্গে তাদের সুন্দর দাম্পত্য সম্পর্কের আলোচনা করলেন৷ (মুসনাদে আহমদ: ১৮১৭৯, নাসাঈ: ১৮৬৫)

    কনে দেখার ক্ষেত্রে বর নিজে না গিয়ে পরিবারের নারীদের পাঠিয়েও দেখার কাজ সম্পন্ন করতে পারে৷ নারীদের থেকে পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেলে পরে বর গিয়ে দেখবে৷

    وإذا لم یمکنه النظر استحب أن یبعث امرأة یثق بہا تنظر إلیہا وتستخبرہ۔ (فتح الملہم ۳/۴۷۶رشیدیة
    অর্থ: বরের জন্য কনে দেখা যদি সম্ভব না হয়, তখন মুস্তাহাব হলো, এমন নারীকে পাঠানো, যার দেখা ও সংবাদের উপর বর নির্ভর করতে পারে৷ (ফতহুল মুলহিম: ৩/৪৭৬)

    কনে দেখার ক্ষেত্রে এখানে কয়েকটি বিষয়টি খেয়াল রাখা দরকার-

    এক. কনে দেখা হবে সর্বশেষ প্রক্রিয়া৷ এর আগে জানাশোনার অন্যান্য বিষয় ও প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করতে হবে৷ আমাদের সমাজে প্রথমেই কনে দেখা হয়৷ এমনটা ঠিক নয়৷ পরবর্তীতে কোনো কারণে বিয়ে না হলে কনে ও তার পরিবারের জন্য লজ্জা ও বিব্রত হওয়ার কারণ ঘটে৷

    দুই. কনে দেখার ক্ষেত্রে যত কম আনুষ্ঠানিকতা হবে, ততই ভালো৷ বরং উত্তম তো হলো, পাত্র যে কোনো উপায়ে চুপিসারে কনেকে দেখে নিবে৷ কিংবা পারিবারিকভাবে গিয়ে দেখে নেবে৷ তবে এই দেখা হতে হবে বিয়ের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া হিসেবে৷

    তিন. যারা অনেক জায়গা দেখেছেন, কিন্তু উপযুক্ততার নিজের বানানো কতিপয় মাপকাঠি নিয়ে দেখেছেন৷ আল্লাহর ওয়াস্তে শরীয়ত কৃত মাপকাঠি ছাড়া বংশ, আঞ্চলিকতা, এরিয়া, সীমানায় ঘুরপাক খেয়ে সময় নষ্ট করবেন না৷ উপযুক্ত জায়গাগুলো হারাবেন না৷

    চার. বিয়েতে ‘কুফু’ বা পরস্পরে সমতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ কিন্তু আমাদের নিজেদের তৈরি বা বৃটিশের দেয়া বংশবৈষম্যকে আমরা কুফু মেনে শরীয়তের নামে জাহিলিয়াতের চর্চা করে যাচ্ছি৷ যার কারণে বিয়েটাকে কঠিন করে দিয়েছি৷ কিন্তু ইসলামে কুফু বা সমতার প্রধান বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে- দ্বীন৷

    ছেলে এবং মেয়ের দ্বীনদারিতায় সমতা রক্ষা হলেই কুফুর প্রধান শর্ত পাওয়া গেলো৷ কিন্তু আমরা বিষয়টিকে সম্পূর্ণ উল্টিয়ে ফেলেছি৷ তবে হ্যাঁ কুফু বা সমতার অন্যান্য পারিপার্শ্বিক বিষয়ও একান্ত প্রয়োজনে খেয়াল করা যায়৷ এগুলোও গুরুত্বহীন নয়৷ তবে মনে রাখতে হবে এগুলো কুফুর মূল শর্তের অন্তর্ভুক্ত নয়৷

    কনে দেখার সময় যে কয়টি প্রশ্ন করতে পারেন

    ১- পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার পাশাপাশি তিলাওয়াত শুদ্ধ আছে কী না জিজ্ঞেস করবেন৷ প্রতিদিন কতটুকু তিলাওয়াত করেন, সেটাও জানা উচিত৷

    ২- এ পর্যন্ত শরয়ী পর্দা মেনে চলার বিবরণ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা৷ নেকাব, হাতমোজা, পা-মোজা ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন কী না৷ ইতোমধ্যে পর্দা পালনে ঘাটতি থাকলেও বিয়ের পর শতভাগ পর্দা মানতে তৈরি আছেন কী না৷

    ৩- মাহরাম নন-মাহরাম মেনে চলেন কী না৷ ভবিষ্যতে কীভাবে এসব মেন্টেন করে চলবেন?

    ৪- স্বামীর আনুগত্যের ব্যাপারে কতটুকু আন্তরিক৷ কারণ এই একটি ফরয অনেকগুলো ফরয আদায়ে সহায়ক হবে৷

    ৫- ক্যারিয়ার ভাবনা ও বাইরে চাকরি করার কোনো প্লান আছে কী না৷ এক্ষেত্রে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী সুস্পষ্ট বলে দেয়া৷

    ৬- যৌথ ফ্যামিলি বা একক ফ্যামিলি, কোনটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন৷ পৃথক ফ্যামিলি চয়েস করলে মন্দ ভাবা যাবে না। এটা একজন বধূর অধিকার। এ ক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনাও সংক্ষেপে বলতে পারেন।

    ৭- ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, সচ্ছলতা-অসচ্ছলতায় নিজেকে মানিয়ে নেয়া, ধৈর্যধারণ করার মতো মনমানসিকতা ও প্রিপারেশন আছে কী না৷

    উল্লেখ্য, সবগুলো সবার ক্ষেত্রে একসঙ্গে আলোচনা করা যাবে না৷ একজন নতুন পরিচিত মানুষ ভড়কে যেতে পারেন৷ ভয় ও আতঙ্কও সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে৷ তাই পরিস্থিতি বোঝে, পূর্ব জানাশোনার আলোকে কিছু কিছু বিষয় নিয়ে হবু স্ত্রীর সাথে কথা বলা যায়৷ সবার সাথে সব বিষয় আলাপ করা যাবে না৷ ব্যক্তি বোঝে আলোচনার পয়েন্ট ঠিক করতে হবে৷