ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের পূজোয় অংশগ্রহণ, শুভেচ্ছা বিনিময় ও প্রসাদ খাওয়ার বিধান
মুফতি জিয়াউর রহমান
হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের পূজা-অর্চনায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সঙ্গে শিরক করে, এটা তারা জেনেবুঝেই করে৷ এবং এটাকে তারা দোষের কিছু মনে করে না৷ বরং পূণ্যের কাজ মনে করে৷ দোষকে দোষ মনে না করা, অন্যায়কে অন্যায় মনে না করা খুবই মারাত্মক এবং দুর্ভাগ্যজনক বিষয়৷ হেদায়াতের পথে বড় অন্তরায়৷
আর আমরা তাদের এসব শিরকি কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করি৷ কারণ শিরককে আমরা মহা অন্যায় মনে করি৷ কেননা আল্লাহ তাআলা শিরককে “মহা অন্যায়” বলেছেন৷ “বড় জুলুম” বলেছেন৷ ইরশাদ হচ্ছে-
ﺇِﻥَّ ﭐﻟﺸِّﺮۡﻙَ ﻟَﻈُﻠۡﻢٌ ﻋَﻈِﻴﻢٞ
অর্থ: নিশ্চয়ই শিরক হলো মহা অন্যায়। (সূরা লুকমান, আয়াত : ১৩)
শিরকের ভয়াবহ পরিণতি হচ্ছে-
اِنَّهٗ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَیْهِ الْجَنَّةَ وَ مَاْوٰهُ النَّارُ وَ مَا لِلظّٰلِمِیْنَ مِنْ اَنْصَار.
অর্থ: নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে (কাউকে) শরীক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়িদা: ৭২)
ইসলামে প্রবেশ করতে হবে পরিপূর্ণরূপে৷ আর পরিপূর্ণ ইসলামের প্রধান শর্ত হচ্ছে, সকল শিরকি-কুফুরি বিশ্বাস ও কাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে সম্পর্কচ্ছেদ করা৷ সবকিছু বর্জন করা৷ কুফর-শিরককে অন্তর থেকে ঘৃণা করা৷ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِی السِّلْمِ كَآفَّةً وَّ لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ الشَّیْطٰنِ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوّ مُّبِیْنٌ.
অর্থ: হে মুমিনগণ! ইসলামে সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাকারা: ২০৮)
আনাস বিন মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন-
ثَلَاثٌ مَن كُنَّ فيه وجَدَ حَلَاوَةَ الإيمَانِ: أنْ يَكونَ اللَّهُ ورَسولُهُ أحَبَّ إلَيْهِ ممَّا سِوَاهُمَا، وأَنْ يُحِبَّ المَرْءَ لا يُحِبُّهُ إلَّا لِلَّهِ، وأَنْ يَكْرَهَ أنْ يَعُودَ في الكُفْرِ كما يَكْرَهُ أنْ يُقْذَفَ في النَّارِ.
অর্থ: তিনটি জিনিস যার মধ্যে রয়েছে, সে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ অনুভব করতে পেরেছে। এক. যার কাছে আল্লাহ ও তার রাসূল ﷺ সবচেয়ে বেশী প্রিয়। দুই. কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই অন্যকে ভালোবাসে। তিন. যাকে আল্লাহ কুফর থেকে মুক্তি দিয়েছেন, সে পুনরায় কুফরের দিকে ফিরে যাওয়াকে এমন অপছন্দ করে যেমন অপছন্দ করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে। (বুখারী হাদীস নং-১৬, মুসলিম হাদীস নং-৪৩)
তাই পূজা বা যে কোনো ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উৎসবে অংশগ্রহণ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে৷ পূজায় যাওয়া নিজের ঈমানের জন্য খুবই ক্ষতিকারক৷ ঝুঁকিপূর্ণ৷ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ آَيَاتِ اللَّهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلَا تَقْعُدُوا مَعَهُمْ حَتَّى يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ إِنَّكُمْ إِذًا مِثْلُهُمْ.
অর্থ: এবং ইতোপূর্বে তিনি কুরআনে তোমাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহ্র আয়াতকে অস্বীকার করা হচ্ছে কিংবা বিদ্রুপ করা হচ্ছে, তাদের সাথে তোমরা বসো না, যতক্ষণ না তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত হয়। অন্যথায় তোমরাও তাদের মত বলে গণ্য হবে। (সূরা নিসা আয়াত: ১৪০)
তাফসিরে মাআরেফুল কুরআনে এই আয়াতের তাফসীরী আলোচনায় বলা হয়েছে, কুফুরির প্রতি মৌন সম্মতিও কুফরি!
আলোচ্য আয়াতের শেষে ইরশাদ হয়েছে-
إنكم إذامثلهم
অর্থাৎ, এমন মজলিস যেখানে আল্লাহ তাআলার আয়াত ও আহকামকে অস্বীকার, বিদ্রূপ বা বিকৃত করা হয়, সেখানে হৃষ্টচিত্তে উপবেশন করলে তোমরাও তাদের সমতুল্য ও তাদের গোনাহের অংশীদার হবে৷ অর্থাৎ, আল্লাহ না করুন, তোমরা যদি তাদের কুফুরি কথাবার্তা মনে-প্রাণে পছন্দ কর, তাহলে তোমরাও কাফের হয়ে যাবে৷ কেননা কুফরিকে পছন্দ করাও কুফুরি৷ (মাআরেফুল কুরআন, উক্ত আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
আত্মপরিচয়ের সংকটে মুসলিম সমাজ
আত্মপরিচয়ের সংকটে আমাদের মুসলিম সমাজ৷ এরা নিজেদের ঈমানের গুরুত্ব বুঝে না৷ নিজের ঈমানের কী দাম, তা উপলব্ধি করতে পারে না৷ ঈমানের দাবি কী, সেটাও জানে না৷ উত্তরাধিকারসূত্রে ঈমান পেয়েছে৷ ত্যাগ, কুরবানী, রক্ত ঝরানো কিছুই লাগে নি৷
যারা কুরবানী দিয়ে ঈমান এনেছে, হেদায়াতের পথে এসেছে, দ্বীন পেয়েছে, তাদের জিজ্ঞেস করুন ঈমানের কী দাম!
যত নবী-রাসূল পৃথিবীতে এসেছেন, সবার তো একই দাওয়াত ছিলো- ঈমান বিল্লাহ ও কুফর বিত-তাগুত৷ অর্থাৎ তাওহিদ গ্রহণ ও শিরক বর্জন৷
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِیۡ کُلِّ اُمَّة رَّسُوۡلًا اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ وَاجۡتَنِبُوا الطَّاغُوۡتَ
অর্থ: নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক উম্মতের ভেতর কোনও না কোনও রাসূল পাঠিয়েছি এই পথনির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে (শয়তান ও মূর্তিপূজা) পরিহার কর। (সূরা নাহল: ৩৬)
শিরকের আয়োজনে অংশগ্রহণ করা
হাদীসে এসেছে-
مَنْ كَثّرَ سَوَادَ قَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ وَمَنْ رَضِيَ عَمَلَ قَوْمٍ كَانَ شَرِيكًا لِمَنْ عَمِلَهُ.
অর্থ: যে ব্যক্তি কোনো কওমের দল ভারী করবে সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে। আর যে কোনো সম্প্রদায়ের কাজের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করবে সে সে কাজের অংশীদার বলে ধতর্ব্য হবে। (মুসনাদে আবু ইয়ালা: ৪/৩১৫, নাসবুর রায়াহ, ৪/৩৪৬-৩৪৭, ফাতহুল বারী হাদীস নং-৭০৮৫)
উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. বলেন-
ﺭﻭﻯ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩ ﺻﺤﻴﺢ ﻋﻦ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ: ﻻ ﺗﺪﺧﻠﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺸﺮﻛﻴﻦ ﻓﻲ ﻛﻨﺎﺋﺴﻬﻢ ﻳﻮﻡ ﻋﻴﺪﻫﻢ ﻓﺈﻥ ﺍﻟﺴﺨﻄﺔ ﺗﻨﺰﻝ ﻋﻠﻴﻬﻢ.
অর্থ: খলীফাতুল মুসলিমীন উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন: তোমরা মুশরিকদের উৎসবের সময় তাদের উপাসনালয়ে যেও না। কেননা, সেখানে তাদের উপর আল্লাহর গযব বর্ষিত হয়।’
(আস-সুনানুল কুবরা, বায়হাকী হাদীস নং-১৮২৮৮)
উপরের আলোচনার সারনির্যাস হলো, অমুসলিমদের ধর্মীয় উপাসনায় অংশগ্রহণ করার বিধান ব্যাখ্যা সাপেক্ষে আরোপিত হবে৷ যদি সে এসব শিরকি অনুষ্ঠান মনেপ্রাণে উপভোগ করে ও তা ভালোর স্বীকৃতি দেয়, তাহলে তা কুফরী হবে৷ ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ আর যদি এমনিতেই সেখানে যায় কিন্তু এসবের প্রতি পজিটিভ বিশ্বাস না রাখে, তাহলে কবীরা গোনাহ হবে৷ হারাম হবে৷ (ফাতাওয়া মাহমূদিয়া: ২৯/৩৪৫, কিতাবুন নাওয়াযিল: ১৬/৩৩৮)
হাদীস শরীফে বেশ কিছু ক্ষেত্রে
خالفوا المشركين خالفوا اليهود
(ইয়াহুদীদের সঙ্গে ভিন্নতা অবলম্বন করো, মুশরিকদের কাজকর্মের সাথে ভিন্নতা অবলম্বন কর) বাক্যটি ধ্বনিত হয়েছে। নামাযে আহ্বনের ক্ষেত্রে ইয়াহুদী, নাসারাদের ঘণ্টা বাজানো ও সিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার প্রথা গ্রহণ না করা, অভিভাদনের ক্ষেত্রে হাত উঠানোর বিকল্প হিসেবে সালামকে গ্রহণ করা, সপ্তাহের পবিত্র দিন হিসেবে শনি, রবির পরিবর্তে জুমা বারকে গ্রহণসহ এ ধরনের বহু ক্ষেত্র বিদ্যমান যেখানে ইসলামের কার্যকলাপকে অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে পৃথক করা হয়েছে।
হিন্দুরা আমাদের কুরবানীকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে৷ তার অন্যতম কারণ হচ্ছে, আমরা গরু দিয়ে কুরবানী করি আর তাদের বিশ্বাস মতে গরু তাদের মা৷ মুসলমানরা তাদের লক্ষ লক্ষ ‘মা’কে কুরবানীতে হত্যা করে৷ এ জন্য তারা আমাদের কুরবানীর প্রতি চরমভাবে বিদ্বেষ পোষণ করে৷
পূজার দিন তারা কী করে? আমাদের মহান রবের সঙ্গে শিরক করে৷ তাঁর তাওহিদের শিক্ষাকে অবমাননা করে৷ এটি তো মুসলমানদের জন্য আরো তীব্রভাবে আত্মসম্মানবোধে লাগার কথা যে, মহান প্রতিপালক ও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সঙ্গে সবচে বড় বেআদবি অবমাননা করা হচ্ছে৷ সেই পূজায় আমি কীভেবে যাই?
তাদের মেলা থেকে খরিদকৃত পণ্যের বিধান
বিধর্মীদের মেলায় অংশগ্রহণ কখনোই জায়েয নয়, হারাম৷ গান-বাজনাসহ অনেকগুলো সম্মিলিত পাপ সেখানে সংঘটিত হয়৷ তবে মেলা থেকে খরীদকৃত পণ্য যদি হালাল হয়, তাহলে সেটা খাওয়া কিংবা ব্যবহার জায়েয আছে৷ তবে
পবিত্র কুরআনে সুরা ফুরকানের আয়াত-
وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا
অর্থাৎ তারা মিথ্যা ও বাতিল মজলিসে যোগদান করে না৷ (সুরা আল-ফুরকান ৭২)
এই আয়াতের তাফসীরে ইবনে আব্বাস রা, বলেন, এর অর্থ মুশরিকদের ঈদ, মেলা ইত্যাদি৷ হযরত মুজাহিদ রাহ, মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়া রাহ, বলেন, এখানে গান-বাজনার মাহফিল বুঝানো হয়েছে৷ (মাআরেফুল কুরআন)
যেহেতু মুশরিকদের মেলায় দেদারসে গান-বাজনা হয়, তাই উপরোক্ত তাফসীরের মধ্যে কোনো অসামঞ্জস্যতা নেই৷ বিধর্মীদের মেলা কিংবা ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ কখনোই জায়েয নয়৷
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেন,
من تشبه بقوم فهو منهم
‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলভ‚ক্ত বলে গণ্য হবে।’ Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০৩১
অন্য একটি বর্ণনায় খলীফা হযরত উমর রাযি. বলেছেন-
اجتنبوا أعداء الله في عيدهم
তোমরা আল্লাহর দুশমনদের উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাক। (আসসুনানুল কুবরা:১৮৮৬২)
অন্য বর্ণনায় তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেছেন ‘কারণ এক্ষেত্রে আল্লাহর অসন্তুষ্টি নাযিল হয়ে থাকে।’
আরেকটি বর্ণনায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেছেন
من بنى ببلاد الأعاجم وصنع نيروزهم ومهرجانهم وتشبه بهم حتى يموت وهو كذلك، حشر معهم يوم القيامة.
অর্থাৎ যারা বিধর্মীদের মত উৎসব করবে, কিয়ামত দিবসে তাদের হাশর ঐ লোকদের সাথেই হবে। (আসসুনানুল কুবরা: ১৫৫৬৩)
দেবতার নাম উৎসর্গকৃত সব রকমের খাবার হারাম
দেব-দেবি, মূর্তিসহ এক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ছাড়া যে কোনো কিছুর নামে উৎসর্গকৃত খাবার চাই তা জীবজন্তুর গোশত হোক বা মিষ্টান্ন দ্রব্য ও প্রসাদ হোক, হারাম৷
সূরাহ বাকারার ১৭৩ নং আয়াতে আছে-
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنزِيرِ وَمَآ أُهِلَّ بِهِۦ لِغَيْرِ اللَّهِ ۖ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَلَآ إِثْمَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অর্থ: তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু। (সুরা বাকারা-১৭৩)
শুভেচ্ছা জানানো
পূজা, বড়দিন বা যে কোনো অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে শুভেচ্ছা জানানো বৈধ নয়৷ শুভেচ্ছা মানে শুভ ইচ্ছা পোষণ করা৷ কল্যাণ কামনা করা৷ শিরকি কর্মকাণ্ডে কল্যাণ কামনা করা কোনো তাওহিদবাদী মুসলমানের জন্য জায়েয হওয়ার প্রশ্নই আসে না৷
اِنۡ تَکۡفُرُوۡا فَاِنَّ اللّٰہَ غَنِیٌّ عَنۡکُمۡ ۟ وَلَا یَرۡضٰی لِعِبَادِہِ الۡکُفۡرَ
অর্থ: তোমরা কুফর অবলম্বন করলে নিশ্চিত জেনে রেখ আল্লাহ তোমাদের কারও মুখাপেক্ষী নন। তিনি নিজ বান্দাদের জন্য কুফর পছন্দ করেন না। (যুমার:৭)
অথচ আমরা শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের কুফরকে পছন্দ করছি৷ নাউযুবিল্লাহ!
ধর্ম যার যার উৎসবও তার, সর্বজনীন নয়
আল্লাহ তাআলার কাছে ইসলামই একমাত্র মনোনীত ও পূর্ণাঙ্গ দীন৷
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ
নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন। (সূরা আলে ইমরান: ১৯)
আল্লাহ তা‘আলা অপর আয়াতে বলেন:
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
যে ব্যক্তি ইসলাম ভিন্ন অন্য কোন দীন (ধর্ম) তালাশ করবে কখনো তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আলে ইমরান: ৮৫)।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
আজ আমি তোমাদের জন্য আমার দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং আমার নিয়ামতকে তোমাদের উপর পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন {ধর্ম} মনোনীত করলাম। (সূরা মায়িদা: ৩)
হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ.
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ
এই আয়াতের অধিনে লেখেন, এই আয়াতে নাস্তিক্য চিন্তাধারার মূলোৎপাটন করা হয়েছে। যাতে উদারতার নামে কুফর ও ইসলামকে এক করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং একথা প্রচার করা হচ্ছে যে, ভালো কাজ করলে ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হলে যে কোন ধর্মাবলম্বীই মুক্তি পাবে- সে ইহুদী, খ্রিস্টান অথবা মূর্তিপূজারী যেই ধর্মেরই অনুসারী হোক না কেন। শর্ত হল ভালো কাজ ও উত্তম চরিত্রের পাবন্দী থাকতে হবে।
এটা মূলত ইসলামী নীতিমালাকে মূলৎপাটন করারই নামান্তর। ইসলামের উৎসব মুসলমানদের জন্যই নির্দিষ্ট৷ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব সেসব ধর্মাবলম্বীদের জন্যই নির্দিষ্ট৷ যে কোনো ধর্মীয় উৎসব সর্বজনীন হতে পারে না৷
Leave a Reply